১৮ এপ্রিল, ২০১৯ ১২:৪৭ ঢাকা প্রতিনিধি
বিএনপি অংশ না নেওয়ায় উপাজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের লড়াইয়ের ফলে কিছু বিশৃঙ্খলা হয়েছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ নেতা রাশেক রহমান। তার মতে, এ সময়টাতে বিএনপি-জামায়াতপন্থী আওয়ামী বিরোধীরা গ্যালারিতে বসে হাতহালি দিয়েছে। তারা আগামীকালের কথা না ভেবে দীর্ঘমেয়াদে মনে করছে, আওয়ামী লীগে বোধহয় একটা বিশাল সংঘাতের ক্ষত, দগদগে ঘা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান চালানো যেতে পারে বলে মনে করেন তরুণ এই রাজনীতিবিদ। তবে এক্ষেত্রে দলের কেউ কেউ ফায়দা লুটতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
অনুপ্রবেশ শব্দটির ব্যাপ্তি অনেক বৃহৎ বলে মনে করেন রাশেক রহমান। তার মতে, কিছু মানুষ সত্যিকার অর্থেই বুঝতে পেরেছে জননেত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশের জন্য কিছু করছে এবং করতে চায়। স্বাধীনতা সংগ্রাম ও যুদ্ধে আওয়ামী লীগই একমাত্র দল যে দলটি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। নতুন প্রজন্মের অনেকই অন্য রাজনৈতিক মতাদর্শের বিশ্বাসী থাকলেও তাদের যখন দৃষ্টি উন্মোচিত হয়েছে তারা তখন আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে। এটাকে অনুপ্রবেশ বলা হয়ত যাবে না।
আওয়ামী লীগের এই নেতার মতে, যারা প্রেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা করে এখন নিজেকে বাঁচাতে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন অথবা আপাতত ভালো থাকার জন্য যারা আওয়ামী লীগে যোগদান করেছে তারাই অনুপ্রবেশকারী। আবার আওয়ামী লীগের সত্যিকারের যে মূলবোধ সামাজিক ন্যায় বিচার বা ধর্ম নিরপেক্ষতার বিষয়গুলো যারা ছলে বলে কৌশলে নষ্ট করছে তাদেরকেও অনুপ্রবেশকারী বলা যেতে পারে।
মুক্তিরআলোটুয়েন্টিফোর.কম / রেজা
১৭ জানুয়ারি, ২০১৯, ১৫:৫৬
পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাতায়ুজ মোরাভেস্কি। বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।
পোলিশ প্রধানমন্ত্রী তার বার্তায় বলেন, পোল্যান্ড ও বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গতিশীলভাবে বিকাশ হওয়া বজায় থাকবে এবং তা শক্তিশালী অভিন্ন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতায় পরিণত হবে।
মুক্তিরআলোটুয়েন্টিফোর.কম / রেজা
স্টাফ রিপোর্টার
মুক্তিরআলোটুয়েন্টিফোর.কম সময় ২১:২৪,০৪ জুলাই ২০১৬
রাজধানীর গুলশানের রেস্টুরেন্টে শুক্রবার রাতে হামলার ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে গ্রেফতার হওয়া সন্দেহভাজন জঙ্গির নাম `শাওন` বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট গোয়েন্দাদের শাওন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে।
হামলা পরবর্তী সময় থেকে পরদিন সকালে যৌথ বাহিনীর অভিযানের আগে পর্যন্ত ভেতরে থাকা জঙ্গি এবং জিম্মি থাকা না থাকা অন্যদের ভূমিকাও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জানিয়েছে সে।
গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে তাকে কড়া পুলিশ পাহারায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় সরাসরি অংশ নিয়েছে এমন সন্দেহে ওই রেস্টুরেন্টের ভেতর থেকে শাওনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের এক গোয়েন্দা।
গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, ওই ঘটনায় যাদেরকে জঙ্গি সন্দেহ করা হয় তাদের ব্যপারেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে শাওন।
মুক্তিরআলোটুয়েন্টিফোর.কম সময় ২০.০৯,০১ জুলাই ২০১৬
বলিউড সুপারস্টার সালমান খানের বিষয়ে কথা বলার যোগ্য নন বলে জানিয়েছেন বলিউড কিং শাহরুখ খান। বৃহস্পতিবার সাংবাদিকরা সালমান খানের ‘ধর্ষিতা নারী’ মন্তব্য নিয়ে শাহরুখের মতামত জানতে চাইলে এ কথা বলেন শাহরুখ।
কিছুদিন আগে অসহিষ্ণুতা নিয়ে কথা বলে বিপাকে পড়েছিলেন ৫০ বছর বয়সী শাহরুখ খান। ‘সুলতান’ সিনেমার প্রচারে গিয়ে সালমান খান যে মন্তব্য করেছেন তা নিয়ে এখন পুরো ভারতজুড়ে সমালোচনার ঝড় বইছে।তাই হয় তো বন্ধুর মন্তব্য নিয়ে কোনো কথা বল নতুন করে বিতর্কে জড়াতে চাইছেন না কিং।
‘ধর্ষিতা নারী’ মন্তব্যে সালমানের ক্ষমা চাওয়া উচিত কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শাহরুখ বলেন, গত কয়েক বছর ধরেই দেখছি, বিভিন্ন বিষয়ে আমি নিজেই অযৌক্তিত মন্তব্য করে যাচ্ছি। ফলে আমি মনে করি অন্যের মন্তব্যের যৌক্তিকতা-অযৌক্তিকতার বিচার করার যোগ্য লোক আমি নই। ওর মন্তব্যের বিষয়ে মন্তব্য করার আমি কে?
অবশ্য এই মন্তব্য করার কয়েক ঘণ্টা পরই মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটারে সালমান খানের সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করেন শাহরুখ খান। যেখানে দেখা যায়, দুজনে দুই বাই সাইকেলে বসে আছেন। লিখেছেন- ‘ভাই ভাই অন বাই সাইকেল।’
সালমান খানের সঙ্গে ‘করন অর্জুন’, ‘হাম তুম হারে সানাম’ সিনেমায় একসঙ্গে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান।
খবর – এনডিটিভির
মুক্তিরআলোটুয়েন্টিফোর.কম
বিদায়ী বছরের অর্থনীতির সম্ভবত উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল, বিনিয়োগের জন্য আর্থিক মূলধনের জোগান আছে, কিন্তু তা কাজে লাগানোর মতো বিনিয়োগের চাহিদা নেই। মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানি কমে যাওয়াতেই তা স্পষ্ট। বেসরকারি খাতের ঋণের চাহিদা বাড়ছে না বলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো অলস অর্থ নিয়ে সমস্যায় আছে। যেকোনো কারণেই হোক, ব্যবসায় পরিবেশে আস্থার অভাব আছে। দেশের শাসনব্যবস্থার নীতিমালার দীর্ঘমেয়াদি ধারাবাহিকতা নিয়ে সংশয় কাটছে না। সে কারণে বিদেশি বিনিয়োগও আসছে না এবং দেশ থেকে পুঁজি পাচার অব্যাহত আছে। বিনিয়োগের জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও জমির স্বল্পতার সমস্যা বিষয়গুলো অবশ্যই জরুরি, তবে ব্যবসায় পরিবেশের আস্থা তৈরি করার বিষয়টি আরও ব্যাপক। শেষ বিচারে সমস্যাটিকে রাজনীতির গতি-প্রকৃতি থেকে আলাদা করে দেখার অবকাশ নেই। গণতান্ত্রিক সুশাসনের ক্ষেত্রে অগ্রগতি ছাড়া অর্থনৈতিক সংস্কারের কার্যক্রম কেবল একটা পর্যায় পর্যন্তই এগিয়ে নেওয়া যায়।
সবকিছু মিলে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় নীতিনির্ধারকদের মধ্যে একধরনের সাময়িক স্বাচ্ছন্দ্যের ভাব বা নির্লিপ্ততা দেখা যাচ্ছে। এর পেছনে কিছু বিষয় কাজ করছে। যেমন, আপাতদৃষ্টিতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়ে আসা, সামগ্রিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা, বৈদেশিক মুদ্রার বড় মজুত ও বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক দরপতনের ফলে আমদানি ব্যয়ে বড় ধরনের সাশ্রয়, যার অনুকূল প্রভাব পড়েছে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য ও বাজেটের অর্থ সংকুলানের ওপর। তবে এই স্বাচ্ছন্দ্যবোধের ফলেই হয়তো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে ধরনের শক্ত পদক্ষেপ দরকার, সেই তাগিদ দেখা যাচ্ছে না। এ ধরনের কিছু জরুরি বিষয় হলো আর্থিক খাতের জালিয়াতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, কর ফাঁকি ও বিদেশে অর্থ পাচার রোধ, রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর অবস্থার উন্নতি করা এবং উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে গতিশীলতা আনা। এসব ক্ষেত্রে ‘যেমন চলছে তেমন চলার’ নীতি অনুসরণ করতে দেখা যাচ্ছে। অথচ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কিছু দৃশ্যমান সাফল্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করা গেলে তা বিরাজমান গণতন্ত্রের ঘাটতি কিছুটা হলে পুষিয়ে নেওয়া যেত। আগামী বছরের চ্যালেঞ্জ এটাই।
তবে সামগ্রিকভাবে দুর্বল বৈশ্বিক অর্থনীতি ও বছর শুরুর রাজনৈতিক অস্থিরতার বিচারে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতি ভালোই করেছে। তবে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সূচনা বছর হিসাবে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিকে উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট উদ্যোগ ও আয়োজন সম্ভব হয়নি।
সম্পাদনায়/সুমি/বাংলাদেশসময়১৬.৪০ঘন্টা,৩০ডিসেম্বর২০১৫
মুক্তিরআলোটুয়েন্টিফোর.কম

বাংলাদেশের রাজনীতির কেন্দ্রীয় ইস্যু ‘পদ্মা সেতু’ দশকের পর দশক ধরে। সর্বপন্থার রাজনীতির লোকেরা পদ্মা সেতুর পক্ষে কথা বলেন। সব আমলেই পদ্মা সেতু নিয়ে কিছু কথা, কিছু উদ্যোগ চলে। সে উদ্যোগ চলে চলে চলে না। ২০০৮ সালে ক্ষমতাসীন শেখ হাসিনা নেতৃত্বের সূচনা থেকেই পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের নৌকায় শক্ত হাতে হাল ধরে উড়িয়ে দেয়া হলো উদ্যোগের পাল। আর কী আশ্চর্য, এই দুনিয়া জাহানের ব্যাংকটিও তার সৃষ্টি-সূচনা থেকে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো বিনিয়োগের নজির সৃষ্টি করল পদ্মা সেতু নির্মাণে সমর্থন দিয়ে। ওদের দেখে এগিয়ে এলো এশিয়া, জাপান, ইসলামী ব্যাংকের পুঁজিও। বর্ষায় প্রমত্ত পদ্মা। এখানে সেতু নির্মাণ হচ্ছে প্রকৌশলীদের জন্য বড় রকমের চ্যালেঞ্জ। সেতুর অর্থায়ন আর নির্মাণ-ডিজাইনের জটিল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা হলো নিপুণভাবে। কিন্তু রাজনীতির আক্রোশ আর ছোবল থেকে রেহাই মিলল না পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের। কেন? কেন? কেন? একই সঙ্গে এতবার ‘কেন’ প্রশ্নটিই বা উত্থাপিত হলো কেনই বা। পৃথিবীতে আর কোনো এমন বিশাল প্রকল্পের বিরুদ্ধে এমন ষড়যন্ত্র হয়েছে কিনা জানা নেই। এই প্রকল্পটি সময়মতো সম্পন্ন হলে শেখ হাসিনা নেতৃত্বের ভাবমূর্তি জনগণের মধ্যে এমনভাবে উজ্জ্বল হবে যে ‘হাসিনা-বিতাড়ন প্রকল্প’ কঠিন হয়ে পড়বে। এই ছিল ওদের শঙ্কার ডঙ্কা ।
তা ‘হাসিনা-বিতাড়ন প্রকল্প’ কেন? খুব সহজ কথা। সীমান্ত রেখা ১৯৭১। একটি সুতীব্র মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ। যুদ্ধাপরাধ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা এবং পৃথিবী থেকে ‘চ্যুত’ যে করতেই হবে। অতএব যুদ্ধাপরাধীদের দেশি-বিদেশি সব শক্তি যুক্ত হলো এই ‘বিতাড়ন-প্রকল্পে।’ পৃথিবীর ‘মহাপ্রভু’ দেশটি চেয়েছিল বাংলাদেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দরটি হবে তাদের ঘাঁটি। শেখ হাসিনা নেতৃত্ব তাতে সম্মত হয়নি। এত্ত বড় সাহস এই দেশের নেত্রীর! এবার বুঝিয়ে দেব। অতএব ওদের প্রফেসর দূতটি ‘পাগল’ হয়ে গেল! সমাজের উঁচু স্তরের সুশীল-বুদ্ধিওয়ালা, সম্পাদক, নানা প্রকারের সুশীল বিশেষজ্ঞ, অর্থনীতি পণ্ডিত সব গোলন্দাজকে একত্র করে প্রফেসর-বাংকার থেকে গোলা নিক্ষিপ্ত হতে থাকল হাসিনা-ক্ষমতাকেন্দ্রে। প্রফেসর সাহেবের ষড়যন্ত্রের কেন্দ্রীয় কুশলীরা এতদাঞ্চলে প্রথমবারের মতো জামায়াত আর ‘কওমী’ গোষ্ঠীকে অনেক কসরত করে একত্র করে বিশাল গর্জনে মাঠে নামিয়ে দিল। আর পদ্মা সেতু প্রকল্প? সেখানে একটি পয়সাও না দিয়েই দুনিয়া জাহানের ব্যাংকটি চিল্লাফাল্লা শুরু করে দিল, পদ্মা সেতুতে যে বিশাল দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়ে গেছে! অতএব ইহা করো, উহা করো। না না হে বাংলাদেশ সরকার, তোমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নাওনি। অতএব ‘ আনা গানা, কুমিরের ছানা হপ’ বলে ওরা একদিন হঠাৎ পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে ফট করে সরে গেল। না, বিশ্বব্যাংকের বোর্ড পর্যায়ে এই প্রত্যাহার-সিদ্ধান্ত নিয়ে আলাপ করেননি তখনকার ব্যাংকের পাড়ি দেব পদ্মাপ্রধান কর্তা জোয়েলিক। তার চাকরির মেয়াদের শেষ দিনে তিনি প্রত্যাহারপত্রে স্বাক্ষর দিয়ে ভেগে গেলেন বিশ্বব্যাংক দফতরের দায়িত্ব থেকে। তা জোয়েলিক সাহেব এমন উন্মাদ হয়ে গেলেন কেন? তাকে বিশ্বব্যাংকপ্রধানের আসনে বসিয়েছিলেন ম্যাডাম হিলারি। সেই হিলারির চাওয়া যে ‘কৃতজ্ঞ’ জোয়েলিককে পূরণ করতেই হবে। তা হিলারি মহীয়সীই বা এমনতরো ‘ব্যাকুল’ হয়ে গেলেন কেন পদ্মা সেতু প্রকল্পটি বিনাশ করতে? সে কার্যকারণ তো দুনিয়াজুড়ে এখন জানা। আমাদের শান্তি-মহামানবের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শেখ হাসিনা সরকারের বিরোধ, বিবাদ, বিতর্ক। হিলারি ক্লিনটন পরিবারের ‘নিতান্ত-একান্ত’ হলেন শান্তি-মহাপুরুষ। হাসিনা-বিতাড়ন প্রকল্পে যে শান্তি মিস্টারেরও তাই একান্ত যোগ। অতএব যে নদীটির নামও শোনেননি হয়তোবা হিলারি কখনো, সেই পদ্মা পাড়ি দেয়ার আয়োজনকে হঠাৎ ভণ্ডুল করে দেয়ার জন্য তার একান্ত অনুগতদের আবদারটুকু তো রক্ষা করবেনই। বিশ্বব্যাংকে চাকরি করা কতিপয় বিএনপি বড় কর্তারাও এ কাজে সম্ভার দিয়েছেন প্রাণপণ।
পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের পাশ থেকে বিশ্বব্যাংক সরে দাঁড়াল আর বাংলাদেশে ‘হাসিনা-বিতাড়ন প্রকল্পে’র সব সাঙাৎ সাংঘাতিক আনন্দে বীভৎস উল্লাসে মেতে উঠল। পদ্মা সেতু আর শেখ হাসিনা সরকার বুঝি একসঙ্গেই শেষ হয়ে গেল। না, হিলারি বোঝেননি, জোয়েলিক বোঝেননি, ‘হাসিনা-বিতাড়ন’ প্রকল্পের বাদবাকি কেউ বোঝেননি, ভুল করেও ভাবতে পারেননি বাংলার মাটি-প্রতিরোধের কত শক্ত ঘাঁটি। সেই মাটির ওপর দাঁড়িয়ে বাংলার নেত্রী বললেন, এবার আর কারো কাছে হাত পাতা নয়। এবার নিজেদের অর্থায়নেই পদ্মা সেতু গড়ে তুলবে বাংলাদেশ। সেই থেকে শুরু হলো এক অনবদ্য উদ্যম। অভাবনীয় গতিতে এগিয়ে চলল সব কাজ। অতঃপর ২০১৫ সালের বিজয়ের ডিসেম্বর মাসে পদ্মা সেতুর দৃশ্যমান অংশের কাজের সূচনা করলেন বাংলাদেশ নেত্রী। সে দিনটিতে মনে হলো পদ্মা নদীর ওপর হাজার হাজার ছোট-বড় নৌযানে বিজয়ের বাংলাদেশ পতাকা হাতে ছুটছে লাখো বাঙালি। ওদের সব বাধা ডিঙিয়ে এগিয়ে যাবেই বাংলাদেশ। পদ্মা সেতু প্রকল্প বিনাশের মূল ষড়যন্ত্রীদের চেহারা সেদিন কেমন হয়েছিল জানি না। সব কাঁটা ধন্য করে পদ্মা সেতু নির্মাণের সূচনা-ফুল ফুটল। এখন অপেক্ষা করছি ২০১৮ সালে ওই পদ্মা পাড়ি দেব কবে। যেতে চাই সড়ক দিয়ে। ফিরব রেলপথে।
বাংলাদেশের নেত্রী এত বড় সাহস করলেন কীভাবে? বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল ভাণ্ডারে যে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা তা দেশের সর্বকালের রেকর্ড। মূলত যে লাখো লাখো বাংলাদেশ-বাঙালি আজ পৃথিবীময় শ্রম-বুদ্ধি-মেধার পরিচয়ে সমুজ্জ্বল, তাদের প্রেরিত অর্থের শক্তিতে বাংলাদেশ নেত্রী এতটা দৃঢ় মেরুদণ্ডের স্বাক্ষর রাখতে পেরেছেন। জনগণের শক্তিতেই তিনি এতটা শক্তিময়ী, সাহসী এবং দৃঢ়চেতা। রোদ-বৃষ্টি-ঝড়েও এতটা অবিচল উজানের মাঝি।
বিশ্বব্যাংক থেকে চলে গেলেন জোয়েলিক। বিশ্বব্যাংক প্রধান এলেন নতুন একজন। এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবেও আর থাকলেন না হিলারি। বিশ্বব্যাংকের ইতিহাসে অবকাঠামোয় এমন বিনিয়োগের ঘোষণা এবং প্রত্যাহারের উল্টাপাল্টা সার্কাস আর দেখা যায়নি। বিশ্বব্যাংকে চাকরি করলেই তো আর সবার সবটুকু বিবেক বিলীন হয়ে যায় না। অতএব জোয়েলিক-হিলারি বিদায়ের কিছুকাল পরই দেখা গেল বিশ্বব্যাংকের গভীর থেকে কিঞ্চিৎ সত্য এবং কিঞ্চিৎ বিবেকের ধ্বনি নানাদিকে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। বিশ্বব্যাংক ইঙ্গিতে জানাল, ভুল হয়ে গেছে ব্যাংক দফতরে। এমনভাবে বিনিয়োগ প্রত্যাহারের যুক্তি যে সামান্য ধোপেই টেকে না এমন কথাই শুনতে পেলাম ওদের দরবার থেকে। গোপনে ইশারা দিলেন তারা, তোমরা চাইলে আমরা ফিরেও আসতে পারি। ওদিকে এশিয়া এবং জাপানওয়ালারাও ওই ইশারাতে উদ্বুদ্ধ হয়ে তাদেরও ফিরে আসার সম্ভাবনার কথা জানালেন। ইসলামী বিশ্বব্যাংকও সে কাতারে দাঁড়াল। কিন্তু এতটুকু কাৎ কিংবা কাতর হলেন না বাংলাদেশ নেত্রী। তিনি বললেন, নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু গড়ব বলে যে ঘোষণা দিয়েছি, তাতেই আমরা অটল-অবিচল। একবার সরে দাঁড়ালাম, আবার ফিরে এলাম-এমনতরো ক্যারিকেচারে আমরা নেই। এমন ঘোষণায়ও চমকে গেল বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি প্রদান-প্রত্যাহারের মূল কুশীলবরা। এমন শক্তি-সাহস-চ্যালেঞ্জ প্রদানের দৃপ্ত উৎসময়ীর রহস্য কোথায়? রহস্য অবশ্যই আছে। সেটা হচ্ছে ডিএনএ। তাঁর জনকের অমন শক্তি আর সাহসের ফলেই পৃথিবীর মানচিত্রে সৃষ্ট হয়েছিল বিস্ময়ের বাংলাদেশ। কোনো কোনো বাক্যপণ্ডিত বলেন, ঠিকই পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়েছিল। একটি প্রকল্পে অত হাজার কোটি টাকা খরচ হবে আর দুর্নীতি এতটুকু হবে না এমন একটি নজির পৃথিবীজুড়ে কেউ দেখাতে পারবে কি? খোদ বিশ্বব্যাংকের খোঁড়লেই দুর্নীতির গোখরো সাপ বাসা বেঁধে আছে। যে ‘ষড়যন্ত্র-তত্ত্বে’ বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়িয়েছে, একই যুক্তিতে তাকে যে পৃথিবীর প্রতিটি প্রকল্প থেকেই সরে দাঁড়াতে হয়। বিশ্বব্যাংকের জোয়েলিক-উত্তর নেতৃত্ব যে কমপক্ষে তাদের ভুলটুকু ইশারায় হলেও স্বীকার করে নিয়েছে, সেটাও ওদের ‘ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব’কে নস্যাৎ করে দেয়।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাভাষী প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কৌশিক বাবু সেদিন বাংলাদেশ ঘুরে গেলেন। আমাদের মানিকগঞ্জের রত্নমানিক বিশ্ব ব্যক্তিত্ব অমর্ত্য সেনের জ্ঞানশিষ্য কৌশিক বসু যেমন বাক্য কৌশলে পদ্মা সেতু প্রকল্প বৃত্তান্ত অতি সংক্ষেপে বয়ান করে গেলেন, তাতে তাকে অজস্র সালাম জানাই। তিনি বললেন, অনেক সময় খারাপ কিছু থেকেও ভালো সংবাদ সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ বিশ্বব্যাংকের প্রত্যাহার সিদ্ধান্তটি ছিল খারাপ। আর বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে এগিয়ে যাওয়া হচ্ছে সুসংবাদ। এমন চিত্তমনোহর বাক্য কৌশলে সত্যিই বিমুগ্ধ হয়েছি দারুণভাবে। জীবনের পড়ন্ত বেলা। শরীরে কঠিন বিপাক। পদ্মা সেতু চালু হলে প্রথম সুযোগেই পাড়ি দেব পদ্মা। যাব সড়কে ফিরব রেলে এমন একটি স্বপ্ন মাথায়। এমন স্বপ্নকে আঘাতে আঘাতে যারা দু’টি বছর পিছিয়ে দিল, সেই ষড়যন্ত্রীদের দেশি-বিদেশি চেনা-অচেনা মুখগুলোর কথা মনে পড়ছে। ওরা আমাদের দু’টি বছর কেড়ে নিয়েছে। ওদের চিৎকার করে বলতে চাই, ফিরিয়ে দাও আমাদের দু’টি বছর। এর ফলে আর্থিক হিসাবে আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ করতে হবে হিলারি-জোয়েলিক-‘শান্তি মহামানব’-‘সুশীল’দানবদের। নির্মিত পদ্মা সেতুর পাশে যেন অমনি একটি ফলক নির্মাণ করে রাখা হয়, সেখানে ওই সেতু নির্মাণে দু’টি বছর কেড়ে নেয়া ভিলেনদের কথা লেখা থাকে। বাংলাদেশের জনগণের পাওনা দু’টি বছর ধ্বংস করা ক্ষতিপূরণের অর্থ ফিরিয়ে দেয়ার কথা যেন লেখা থাকে। মানবসভ্যতার সুশাসনের স্বার্থেই এটা প্রয়োজন।
লেখক : রম্যলেখক ও গবেষক
সম্পাদনায়/সুমি/বাংলাদেশ সময় ১২.১০ঘন্টা,২৯ডিসেম্বর ২০১৫